যদি ফিরে আসি

লেখকঃ  নয়ন দেবনাথ 

যদি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি
 শ্রান্ত শরীর নিয়ে পা টেনে টেনে 
যদি ক্ষুধায় জ্বলে উদর 
তুমিও কী ফিরায়ে নেবে মুখ? 
হে প্রিয় বনভূমি! 
তুমিও কী দেবে না দুটি ফল ভিক্ষে? 

 যদি সব হারিয়ে ফিরে আসি তোমার কাছে 
যদি চোখের জলে ভেসে যায় সুখ 
যদি তৃষ্ণায় ফাটে বুক 
তুমিও কী ফিরায়ে নেবে হাত? 
হে প্রিয় স্রোতস্বিনী! 
দেবে না কী এক আজলা জল অঞ্জলী? 

 যদি কখনো হারিয়ে ফেলি সুর 
তানপুরার তার ছিঁড়ে যায় কভু 
একটু সুধার লাগি যদি হাহাকার করে মন 
যদি ফিরে আসি তোমার কাছে হে পাথি! 
তুমিও কী ফিরায়ে নেবে মুখ? 
শোনাবে না তোমার কূঁজনগীতির সুধা? 

 যদি কখনো হেরে যাই জীবন পথে 
যদি সবাই ফিরিয়ে নেয় মুখ 
জগত্‍সংসার যদি আটকে দেয় সদর দরজা 
পরাজিতকে যদি কেউ না দেয় ঠাঁই 
যদি ফিরে আসি তোমার কাছে 
হে ভোরের কুয়াশা! আমার অন্তিম আশ্রয়। 
তোমার চাদরে ঢেকে রাখবেতো আমার সকল ব্যর্থতা?  

.          ১শ্রাবণ ১৪১৮ বঙ্গাব্দ।

আমার কষ্টগুলো

লেখকঃ নয়ন দেবনাথ

..... ..... .....
আমার নিষ্পেষিত অনিন্দ্য দুঃখ গুলো
ছন্দময় গানের সবুজাভ সুর হয়ে,
হৃদয় বীণায় ঝড় তুলে বেড়ায় অহর্নিশ।
আলোর ব্যাকরণ ভেঙ্গেছুড়ে
নতুন এক কৃত্রিম তাল সৃষ্টি করে,
জীবনের ঝড়ো নদীতে।

আমার একাগ্র ইচ্ছে গুলো,
অচেনা চিলের ডানায় ভর করে
ছড়িয়ে পড়ে অন্ধকার পৃথিবীময়।
একসময় ক্লান্ত হয়ে, ক্লান্ত হয়ে
হারিয়ে যায় মরু সাহারার ধূসর বালিতে।

আমার স্বপ্নগুলো অজস্র ভ্রান্ত ধূলিকণায়
ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার হয়ে যায়,
মরীচিকার মতো আলেয়ার পিছনে ছুটে ছুটে।
কখনো কখনো নির্লিপ্ত হাহাকার তুলে
কষ্টের প্লাবনে ভাসিয়ে নিয়ে যায়,
হৃদয় নদীর আকাঙ্ক্ষিত কূল।

আমার চাওয়াগুলো
কেবলি গ্যাস বেলুনের মতো উর্ধ্বগামী।
কিন্তু সীমানায় পৌঁছুতে পারেনি কখনই।
জীবনের ব্যর্থতা, কঠিন বাস্তবতা
আর দারিদ্রের ভার বইতে না পেরে
সে বেলুন, নিউটনের আপেলের মতো
মাটির সাথে মিতালীর অপেক্ষায়।

আমার ভাবনাগুলো
কেবলি দূরে সরে যায়।
ঝড়ের পাখির মতো লক্ষ্যহীন ছুটাছুটি করে।
ক্লান্ত পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছুতে পারেনি কখনই।



* ১৬ মাঘ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ। শীতকাল।

কঠিন সময়

লেখকঃ নয়ন দেবনাথ


জোছনা ভেজা স্নিদ্ধ আলোতে
নিভু নিভু করছিল সন্ধ্যার মলিন আকাশ।
আকাশের তারা গুলো মিটিমিটি করে
উজ্জ্বলতা বাড়াচ্ছিল ক্রমশ।
বিলম্বিত নীড়ে ফেরা পাখি গুলো
হামলে পড়ছিলো সন্ধ্যার গাঢ় আকাশে।
এমনি বিলাসী রাতের প্রহরে
পাশা পাশি বসেছিলাম আমরা দু'জন।
আমরা কেবলি ভাবছিলাম
জীবনের চাওয়া পাওয়া, হৃদয়ের গভীরতা,
ভালবাসার সেতুবন্ধন, দু'জনার একটি বাড়ি।
বছর গড়িয়ে একই বাগানে দুটি ফুল।
আমাদের জমজ সন্তান।
হাসিখুশি ভরা স্বর্গীয় নীড়ে
আমাদের স্বপ্নীল সুখের সংসার।
কিন্তু আমাদের ভাবনাগুলো
কেবলি ফিরে ফিরে আসছিল।
বাস্তবতার কঠিন আবর্তে পড়ে
হারিয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ।

আমাদের সাজানো বাগান মাড়িয়ে দিয়ে যায়
ঘাতক হড়িণের দল।
আমাদের স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে স্হায়ী আসন গড়ে।
আমাদের সম্পর্কের সেতুবন্ধন
ভেঙ্গে পড়ে জীবনের মাঝ নদীতে।
হৃদয়ের গভীরতা হারিয়ে যায়
অবিশ্বাসের নিষ্ঠুর গহ্বরে।
আমরা কেবলি অসহিঞ্চু হয়ে উঠছিলাম।
এক সময় দু'জন দু'জনকে দোষ দিতে দিতে
বেড়িয়ে পড়লাম দু'জন দু'দিকে।


* ৩০ পৌষ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ।
শীতকাল।

ছিলে একদিন

লেখকঃ নয়ন দেবনাথ


নীল আকাশের নক্ষত্রের আলোয়
ভরে উঠেছিল আমার চারপাশ।
জীবনের জটিল দুঃখ গুলো যদিও
খিল দিয়ে রেখেছিল হৃদয়ের দরজায়।
তবুও মনের গহীন বাগানে
আগাছা ভেদ করে ঠিকই চিনে নিয়েছিল
আমার তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি।
তুমি হয়তো ফুল নও
হয়তো হাজারো ফুলের কাঁটা।
তবুও তোমার সান্নিধ্যেই আমার অসহিষ্ণু মন
খুঁজে পেয়েছিল সুখের অকিঞ্চিত্‍ ঠিকানা।
ছড়াতে পেরেছিল হৃদয় যন্ত্রণার
জ্বলন্ত রক্তিম আভা।
যদিও সে আলো বদলে গিয়েছিল
নিকট সময়ের তৃষিত অন্ধকারে।

কিন্তু তুমিইতো ছিলে একদিন
হৃদয় মাঝে, জীবনের সাথে।
ভালবেসে ছড়িয়েছিলে আলো
নীল আকাশের তারায় তারায়।
পাখির সুরে গেয়েছিলে গান
রাতজাগার ক্লান্তি ভুলে।

দূর জানালায় নিভু নিভু প্রদীপের আলোয়
আলোকিত করেছিলে আমার হৃদয়ের
অন্ধকার কক্ষগুলো।
অশ্রুবাহিত তপ্ত নদীর বিপরীত স্রোতে
ভাসিয়েছিলে আমাদের প্রাণহীন সুখতরী।
যদিও তার সান্নিধ্য পাওয়া হয়নি কখনোই।
তবুও তো ছিলে সাথে।
ঝড়ের রাতের দুর্দশায়, জলোচ্ছাসের দানবতায়ঃ,
অনাবৃষ্টির তপ্ত মাঠে, নদীর ভাঙ্গনে।
তুমিইতো পাশে দাড়িয়ে ছিলে
বট বৃক্ষের নির্ভরতায়।
শুনিয়েছিলে আশার বাণী
পাশে থাকার অভয় দিয়ে।
আজ হয়তো ভুলে গেছ সব।


* ২৮ পৌষ, ১৪১০ বঙ্গাব্দ।
শীতকাল।